জিয়া উদ্দিন আহমদ অ্যাডভোকেট :

১৯৭৩ সালে আইনপেশায় যোগদান। আর এখন ২০২৪ সাল। মাঝখানে পেরিয়ে গেছে দীর্ঘ ৫১টি বছর। প্রফেসর নুর আহমদ অ্যাডভোকেট, আমার বাবা। একজন আইনজীবী, শিক্ষাবিদ, লেখক, গবেষক, ইতিহাসবিদ, আইনবিশারদ, রাজনীতিবিদ সহ আরো অনেক গুনে গুণান্বিত। একজন সফল পিতা।

অসাধারণ মেধা ও প্রখর প্রতিভাসম্পন্ন এই মানুষটি আইনজীবী হিসেবে অতিক্রম করেছেন ৫১ বছরের একটি মাইলফলক। বাবাকে জানাই স্যালুট, অভিনন্দন। মহান আল্লাহর কাছে শোকরিয়া জ্ঞাপন করছি। আমার প্রেরণা, আমার অহংকার, পথচলার সাহসী অভিভাবক-আমার বাবা অ্যাডভোকেট নুর আহমদ।

বাবা জন্মেছিলেন, ১৯৪৩ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর, কক্সবাজার সদর উপজেলার খরুলিয়া গ্রামে। পিতা ছিলেন-মৌলভী ছৈয়দ আহমদ। মাতা ছিলেন-গুলবাহার খাতুন। নুর আহমদ ছিলেন, ৫ ভাই ৪ বোনের মধ্যে তৃতীয়।

অনেকেই তাঁকে অধ্যাপক নুর আহমদ হিসাবে চিনেন। কারণ তিনি কক্সবাজার কলেজ সহ বিভিন্ন কলেজে ১৯৬৬ সাল থেকে ১৯৭২ সাল পর্যন্ত অধ্যাপনা করেছেন। আবার কক্সবাজার আইন কলেজ প্রতিষ্ঠার পর সেখানে ১৯৮৫ সাল থেকে দীর্ঘদিন তিনি অধ্যাপনা করেছেন বিনাবেতনে সুনামের সাথে। তার স্বীকৃতি স্বরূপ ২০২০ সালের প্রথম দিকে কক্সবাজার আইন কলেজের সাবেক সফল অধ্যাপক হিসাবে কক্সবাজারের তৎকালীন জেলা প্রশাসক মোঃ কামাল হোসেন সহ বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ তাঁকে আনুষ্ঠানিকভাবে বিশেষ সম্মাননায় অভিষিক্ত করেন।

একজন স্বনামধন্য আইনজীবী হিসাবেও তিনি সবার কাছে সুপরিচিত। বাংলাদেশ বার কাউন্সিল থেকে অ্যাডভোকেটশীপ সনদ নিয়ে একজন নবীন আইনজীবী হিসাবে ১৯৭৩ সালের ৩০ জানুয়ারি তিনি কক্সবাজার জেলা আইনজীবী সমিতিতে যোগদান করেন। তখন থেকে তিনি দীর্ঘ ৫১ বছর যাবৎ কক্সবাজারে আইন পেশায় জড়িত। যদিও বয়সের ভারে জ্ঞান পিপাসু এই মানুষটি এখন আর তাঁর প্রিয় অঙ্গন আদালতের দিকে খুব একটা যেতে পারেন না। তিনি দীর্ঘদিন আদালতে সিনিয়র আইনজীবী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। কক্সবাজার জেলা আইনজীবী সমিতির প্রায় ১১ শত বিজ্ঞ সদস্যদের মধ্যে আমার গর্বের ধন, আমার বাবা অ্যাডভোকেট নুর আহমদ এর ক্রমমান ০১ (এক)। যা আমাকে প্রেরণা ও প্রত্যয়ে প্রতিনিয়ত সমৃদ্ধ করে।

কক্সবাজার জেলার সর্বোচ্চ আইন কর্মকর্তা হিসাবেও কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) পদে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। আদালতে ফৌজদারী আইনের বিশ্লেষণ ও উপস্থাপনায় অনবদ্য ভূমিকা রেখেছেন-জীবনের অধিকাংশ সময়। আদালতে তাঁর প্রাজ্ঞ, প্রাঞ্জল ও সাবলীল উপস্থাপনা ছিলো অনুসরনীয় ও শিক্ষনীয়। আইনের ব্যাখা ও আইন চর্চায় বাবার অসাধারণ প্রতিভা সবার দৃষ্টি কাড়তো। সফল আইনজীবী হিসাবে ২০১০ সালে পেয়েছেন-কক্সবাজার জেলা আইনজীবী সমিতির বিশেষ সম্মাননা। সাবেক আইন প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম এর হাত থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে নিয়েছেন এই সম্মাননা। এছাড়াও কর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ বিভিন্ন সময়ে পেয়েছেন, আরো অনেক গুরুত্বপূর্ণ পুরস্কার।

লেখালেখির প্রতি ছিল তাঁর প্রবল আকর্ষণ। করতেন ইতিহাস চর্চা ও গবেষণা। কক্সবাজার জেলার সর্বিক বিষয়াদি নিয়ে ১৯৮৮ সালে বাবা জেলার সর্বপ্রথম “কক্সবাজারের ইতিহাস” গ্রন্থটি প্রকাশ করেন। এজন্য দীর্ঘ প্রায় একদশক এ অঞ্চলের বিভিন্ন বিষয়ে গবেষনা করেছেন তিনি। “কক্সবাজারের ইতিহাস” গ্রন্থটির পাঠক কাটতি বেড়ে যাওয়ায় ২০০৫ সালে গ্রন্থটি ২য় সংস্করণ বের করা হয়। অসাধারণ পাঠক জনপ্রিয়তা পায় লেখক-গবেষক নুর আহমদ এর এক দশকের সাধনার ফল “কক্সবাজারের ইতিহাস” গ্রন্থটি।

আইনপেশার বিভিন্ন দিক নিয়ে তাঁর প্রকাশিত বিভিন্ন প্রবন্ধ নিয়ে ২০০৪ সালে আইন বিষয়ে বাংলা ভাষায় “আইন ও বিচার” এবং ইংরেজী ভাষায় “Law & Justice” গ্রন্থ প্রকাশিত হয়।
শিক্ষাজীবনে আমার বাবা নুর আহমদ কক্সবাজার মডেল হাইস্কুল থেকে ১৯৬০ সালে এসএসসি এবং ১৯৬২ সালে চট্টগ্রাম সরকারি কলেজ হতে কৃতিত্বের সাথে এইসএসসি পাশ করেন। তিনি ছাত্রজীবনে চট্টগ্রাম কলেজে অর্থনীতি সংসদ এর প্রথমে সদস্য ও পরে সহ সভাপতি হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬৫ সালে প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি অর্থনীতিতে অনার্স এবং ১৯৬৬ সালে মাস্টার্স সম্পন্ন করেন সফলতার সাথে।

জীবনের অধিকাংশ সময় বিভিন্নভাবে জ্ঞান অর্জনের পেছনে নিরন্তর ছুটে চলা আমার বাবা অ্যাডভোকেট নুর আহমদ বার্ধক্যজনিত কারণে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে কক্সবাজার শহরের দক্ষিণ টেকপাড়াস্থ নিজ বাসভবন “পর্ণলতা” তে নিভৃতে বসবাস করছেন। সমাজে আলো ছড়ানো এই নিরহংকারী, সাদামনের মানুষটির দীর্ঘ হায়াতের জন্য মহান আল্লাহর অসীম রহমত, সবার কাছে দোয়া ও আশীর্বাদ কামনা করছি।

(লখক : কক্সবাজার জেলা আইনজীবী সমিতির একজন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী, সমিতির ৩বার নির্বাচিত সাবেক সাধারণ সম্পাদক এবং অ্যাডভোকেট নুর আহমদ এর জ্যেষ্ঠ সন্তান।)